মেকআপের মধ্যে ফাউন্ডেশন এমন একটা জিনিস, যেটা ঠিকভাবে না বসলেই পুরো লুকটাই মাটি হয়ে যায়। অনেকেই হয়তো দামী ফাউন্ডেশন কিনে এনেছেন, কিন্তু সেটা নিজের ফেইসে আ্যাপ্লাই করার পর মনে হয় যেন—”উফ্! এটা তো আমার সাথে একদমই যাচ্ছে না!” তার মানে, শুধুমাত্র দাম দেখে ফাউন্ডেশন কেনা মোটেই ঠিক না। নিজের স্কিনের রঙ, ধরন, আর ও অনেক বিষয় মাথায় রেখে তবেই সঠিক ফাউন্ডেশনটি বেছে নেওয়া উচিত।
প্রথমেই যেটা আপনার জানা দরকার, সেটা হলো আপনার নিজের ত্বকের ধরন কেমন। অনেকেরই স্কিন খুব তেলতেলে হয়ে থাকে, আবার অনেকের ত্বক এতটাই ড্রাই যে কারন ছাড়াই চামড়া উঠতে থাকে। তাই নিজের স্কিন টাইপ টা কি সেটা আগে আপনাকে জানতে হবে। তৈলাক্ত ত্বক বা oily skin যাদের, তাদের জন্য ম্যাট ফিনিশিং আসে এমন ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা ভালো কারণ এটা অয়েল কন্ট্রোল করে আর লম্বা সময় ধরে স্কিনকে ফ্রেশ রাখে। আবার যাদের dry skin তাদের জন্য হাইড্রেটিং বা ডিউয়ি ফিনিশিং আসে এমন ফাউন্ডেশন ঠিকঠাক কাজ করে। এ ধরণের ফাউন্ডেশন স্কিনকে ড্রাই দেখানো থেকে বিরত থাকে এবং একটা ন্যাচারাল গ্লো দেয়।
তারপর আসি সবচেয়ে কনফিউসিং পার্ট—ফাউন্ডেশনের শেড সিলেকশনে। এটা পারফেক্টলি স্কিনটোনের সাথে ম্যাচ করা অনেক সময় রীতিমতো একটা ভীতিকর কাজ হয়ে দাঁড়ায়। foundation bottle হাতে নিয়ে একটা শেড মনে হচ্ছে পারফেক্ট, কিন্তু মুখে লাগালেই সেটা একদমই mismatch! এই ধরণের বিপত্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে নিজের ত্বকের আন্ডারটোন সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানা। এবং সেই অনুযায়ী আন্ডারটোন এর সাথে ম্যাচ করে আপনার স্কিনের জন্য সঠিক ফাউন্ডেশনটি বেছে নেওয়া। আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন তা হল আমাদের এশিয়ান সাবকন্টিনেন্টের আন্ডারটোন এর জন্য শুধুমাত্র একটি ফাউন্ডেশনের শেড দিয়ে হুবহ স্কিনটোন পাওয়া টা একটু কঠিন। তাই যারা নিজেদের স্কিনটোন হুবহু রাখা নিয়ে সচেতন তারা কিন্তু দুইটি শেড মিক্স এন্ড ম্যাচ করে ব্যাবহার করতে পারেন।
আন্ডারটোন শুনলেই মনে হয় কেমন যেন জটিল বিষয এটা, কিন্তু আসলে তা নয়। খুব সহজেই আপনি আপনার আন্ডারটোন কি তা জেনে নিতে পারবেন একটা টেস্টের মাধ্যমে—আপনি আপনার হাতের এলবো এর ভেতরের দিকে তাকান, আপনার ভেইনের রঙ দেখে বুঝতে পারবেন আপনি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ছেন। যদি আপনার ভেইন সবুজাভ বা ওলিভ ধরনের হয়, তাহলে আপনি ওয়ার্ম আন্ডারটোনে পড়েন। আবার যদি আপনার ভেইন নীলচে বা বেগুনি রঙের হয়, তাহলে আপনি কুল আন্ডারটোনের। আর যদি সবুজ নীলের মিক্স হয় তাহলে আপনি নিউট্রাল আন্ডারটোন। এই সবজ উপায়ে আন্ডারটোন বুঝে ফাউন্ডেশনের শেড সিলেক্ট করে নিলেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার স্কিনের জন্য পার্ফেক্ট ফাউন্ডেশন শেডটি।
আরেকটা বিষয় অনেকেই করে থাকেন তা হলো হাতের উপর ফাউন্ডেশন লাগিয়ে হাতের স্কিনের সাথে ম্যাচ করেই কিনে ফেলেন। এটা আসলে একেবারেই ভুল পদ্ধতি, এর কারণ হাতের স্কিন মুখের স্কিন থেকে আলাদা শেড হয়ে থাকে। ফাউন্ডেশন টেস্ট করার পার্ফেক্ট জায়গা হলো গলার পাশে বা জ-লাইন বরাবর। এখানে ফাউন্ডেশন টেস্ট করে দেখলে বোঝা যায় এই শেডটি আসলে ফেইসের স্কিনের সাথে যাচ্ছে কিনা। আর হ্যাঁ, এটা অবশ্য ন্যাচারাল লাইটে দেখতে পারলে ভালো হয়।
আরও একটি ছোট্ট টিপস—ফাউন্ডেশন নামেও অনেক কিছু বলে দেয়। যেমন “Warm Nude”, “Golden Beige”, “Cool Ivory”—এসব নামের মধ্যেই আন্ডারটোনের ইঙ্গিত দেওয়া থাকে। নামগুলো একটু খেয়াল করলেই আপনি নিজের জন্য পারফেক্ট ফাউন্ডেশন খুঁজে পাবেন।
কিন্তু শুধুমাত্র শেডই না, ফাউন্ডেশনের টেক্সচার, কভারেজ এবং লং লাস্টিং পাওয়ার—এসবকিছু মিলিয়েই ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করতে হয়।কেউ প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে হালকা মেকআপ করেন, তাদের জন্য লাইট কভারেজ বিবি ক্রিম বা সিসি ক্রিম টাইপ ফাউন্ডেশন বেস্ট। আবার পার্টি, ওয়েডিং বা ফটোশ্যুটের জন্য দরকার ফুল কভারেজ ফাউন্ডেশন যা স্কিনের ইমপার্ফেকশন ঢেকে ফেলে।
অনেকেই একটা ভুল করে থাকেন—একটা ফাউন্ডেশন কিনেই সব ওয়েদারে ব্যবহার করতে থাকেন। কিন্তু আমরা জানি, আবহাওয়ার সাথে সাথে ত্বকের নেচারও বদলায়। গরমে স্কিন একটু ডার্ক হয়ে যায়, শীতে আবার ফেকাসে লাগে। তাই দুইটা ফাউন্ডেশন মিক্স ম্যাচ করে ব্যবহার করলে সারা বছর কোনো সমস্যা হয় না।
আর একটা ব্যাপার না বললেই নয়—অনেক সময় কিছু ফাউন্ডেশন দেখতে ভালো, দামও বেশী কিন্তু স্কিনে সেট হয় না। ফেটে যায় বা স্কিনে ইরিটেশন হয়ে থাকে। তাই নতুন ফাউন্ডেশন কেনার আগে ছোট টেস্টার দিয়ে দু একবার টেস্ট করে দেখে নেওয়া ভালো সেটা স্কিনে কোন সমস্যা করছে কিনা।
সবশেষে বলতে চাই- ফাউন্ডেশন মানে স্কিন ঢেকে ফেলা না, বরং স্কিনকে আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরা। সঠিক ফাউন্ডেশন সিলেকশন আপনার ত্বকের ধরন, রঙ, আবহাওয়া ও প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। উপরের দিকনির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত ফাউন্ডেশন বেছে নিতে পারবেন। এটি আপনার মেকআপ আর্টকে আরও নিঁখুত করে তুলবে।